Thursday, May 1, 2025

 ইষ্টানন্দ মহারাজ

-   ডঃঅনিরুদ্ধবর্মণ

ছোট বয়েস থেকে রামকৃষ্ণ মিশনে মানুষ হয়েছি। বাবা চেরাপুঞ্জি রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন। আমরা স্কুল কোয়াটারে থাকতাম। মহারাজদের দূর থেকে নমস্কার করেছি, অনেককে প্রনামও করেছি কিন্তু মনে  কেউ ঠিক সেভাবে যায়গা করে নিতে পারেননি। শ্রদ্ধা অনেককেই করেছি। তবে আজকে যাঁর কথা বলব তিনি একটু আলাদা।

তখন শৈল শহর তুরাতে, তুরা সরকারী মহাবিদ্যালয় (তুরা গভরমেন্ট কলেজে) কাজ করতাম। চেরাপুঞ্জি রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজরা আসতেন দীক্ষা দিতে। সাভাবিকভাবেই ওনাদের দীক্ষিত শিষ্যদের বাড়িতেই থাকতেন। এসে আমাদের কারুর কোন দিন যোগাযোগ করার চেষ্টাও করননি। বাবা বহু বছর কাজ করেছেন রামকৃষ্ণ মিশনে। চেরাপুঞ্জিতে থাকার সময় মা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন। কিন্তু কেউ কিছু মনে রাখার চেষ্টা করেনি বা কোন খোঁজ খবর রাখার চেষ্টাও করেনি। চেরাপুঞ্জির কোন অনুষ্ঠানের খবরও পেতাম না। এমনিতেই দীক্ষিত নই তার ওপর বিধর্মী। তবু খুব কষ্ট পেতাম, কিন্তু কোন দিন প্রকাশ করিনি।

তখন মোবাইল ফোনের যুগ শুরু হয়নি। ল্যান্ড ফোনের যুগ। একদিন একটা ফোন এল। তখন ফোনের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারতাম স্থানীয় ফোন না বাইরের। ফোনের আওয়াজ শুনেই বুঝলাম সেটা স্থানীয়। ফোন ওঠালাম। ওপার থেকে ভেসে এল এক গম্ভীর স্বর, ‘আমি কি অনিরুদ্ধ বর্মণের সংগে কথা বলতে পারি?’ তুরাতে কেউ আমাকে এইভাবে সম্বোধন করত না। বর্মণ, বা প্রোফেসর বর্মণ বা অনিরুদ্ধ, বা বর্মণ স্যার, কেউবা ডাক নামে। সঙ্গে সঙ্গে একটা কোথায় অন্য এক সুরের আওয়াজ  পেলাম। ‘আমি চেরাপুঞ্জি রামকৃষ্ণ মিশনের হেডমাস্টার ও সেক্রেটারি মহারাজ (নামটা অনিবার্য কারনে উহ্য রাখলাম) বলছি’। শুনেই তানপুরার এক তারে টান পড়ল। একজন কেউ এতবছর পর আমাকে স্বীকৃতি দিতে এসেছে। সময় নষ্ট না করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মহারাজ, আপনি কোথায় আছেন?’ ‘আমি মেঘাবাবুর বাড়িতে আছি।’ স্বাভাবিকভাবেই মহারাজরা এসে হয় মেঘাবাবুর বাড়ি নাহলে রাহাবাবুর বাড়িতে এসে থাকতেন।

আমি বললাম, ‘মহারাজ, আপনি ওখানেই থাকুন, আমি আসছি।’ কথাটা যেন নিজের থেকেই বেরিয়ে এল মুখের থেকে। মাকে বললাম চেরাপুঞ্জির মহারাজ এসেছেন, নিয়ে আসতে যাচ্ছি। নিজের ওপর প্রবল বিশ্বাস। মেঘাবাবুর বাড়ি গিয়ে প্রথমেই ওনাকে প্রনাম করলাম। এই কাজটা আমি সধারনত করতামনা । উনি বয়সে আমার সমান বা একটু ছোট বা বড় হবেন। কিন্তু প্রনাম করার সময় কিছু চিন্তা করতে হয়নি। এমনিতেই করে ফেললাম। বললাম, ‘মহারাজ, চলুন।’ মেঘাবাবু বলে উঠলেন, ‘খাওয়াদাওয়া করে যান!’  মহারাজ বলে উঠলেন, ‘আপনারাতো গাড়ো, আপনাদের বাড়িতে আমি খাবনা, আমি খাশিয়াদের বাড়িতে খাব।’ এইবলে আমাদের বাড়ি চলে এলেন।

মা, বিপদে পড়লেন। আগে মহারাজরা আমাদের বাড়িতে প্রায়ই খাওয়া-দাওয়া করতেন। তখন সবকিছুই খেতেন। এতদিন প রএখন কী খাবেন? মহারাজ ব্যাপারটা বুঝে নিজেই বলে উঠলেন, ‘আমি মুরগীর মাংস ছাড়া সবই খাই।’ চিন্তার কোন  যায়গা আর রইলনা। মা মহা আনন্দে রান্না করতে গেলেন। মার রান্নার প্রশংশা সবাই করতেন। খাবার আগে মহারাজ আমার সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের (MBOSE) অফিসে গেলেন এবং আমার যেহেতু ওখানে পরিচিতি ছিল ওনার কাজ করতে সুবিধা হোল।  গাড়িতে আমাকে বললেন, আমাদের পরের ব্যাচের একটা ছেলে ছিল নিতাই হাজং নামে, তার বাড়িতে ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছেন। আরএকটিছেলেছিল, সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য  পোস্টঅফিসে কাজ করত আর একটা মেসে থাকতে। পাহাড়ের ওপর সেই মেসেও গিয়েছিলেন ওর সঙ্গে দেখা করতে। সিদ্ধার্থ স্কুলে হস্টেলে থাকত। ওর রামকৃষ্ণ মিশনের ওপর আমাদের থেকে আরও বেশি রাগছিল।

সেবার চেরাপুঞ্জি ফিরে যাবার পরপ্রায়ই আমায় ফোন করতেন। অনেকটা বন্ধুর মত হয়ে গিয়েছিলাম। একদিন ডনবস্কোর এক ফাদারের সঙ্গে শিলং গেলাম। রাতে ডনবস্কোর এক গেস্ট হাউসে ছিলাম। রাত দশটার দিকে একটা ফোন। পাহাড়ে দশটা অনেক রাত। তাছাড়াও শিলং আরও পূর্বদিকে, রাতটা একটু তাড়াতাড়ি হয়। এখানে আমাকে কে ফোন করবে? মাওতো ফোন নম্বর জানেননা। আমি নিজেও জানিনা। অফিসঘরে ফোন। মহারাজ ফোন করেছেন। ‘আমি এখানে আছি কীকরে জানলেন?’ ‘তোমার মাকে ফোন করেছিলাম বললেন তুমি এক ফাদারের সঙ্গে শিলং এসেছ। তাই খোঁজ করে ফোন নম্বার জোগাড় করলাম। এত কাছে এসেছ, চেরাপুঞ্জি আসবে না?’ ‘মহারাজ, এবার তো হবে না। পরে আরেক বার যাব’ খুব কষ্ট পেলেন বুঝলাম। কিন্তু তখন আমার উপায়ও কিছু নেই।

একদিন একটা ফোন, এবার শিলং থেকে। ‘আমাদের ভাইস প্রিন্সিপাল অবসর নিচ্ছেন কয়েক মাসের মধ্যেই, ভাবছিলাম ওনার মত যোগ্যতা সম্পন্ন আমাদের নিজের লোক কেউ যদি ওনার যায়গায় জয়েন করতে পারতেন ...’ আমি চিন্তায় পরে গেলাম, কার কথা বলা যায়, এই ভেবে। কারোর কথা তক্ষুনি মনে পরছেনা। মহারাজ ঠিক সেই সময় বোমটা ফেললেন, ‘ভাবছিলাম তুমি যদি আসতে পার।’ আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কী বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। যেখানে একদিন বাবার যায়গায় আমার জয়েন করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু আমাকে তখন কেন জানি মনে হোল সেই পোস্টে নেওয়া হবে না! যেখানে শৈশব আর কৈশোরের সেরা দিনগুলো কাটিয়েছি যেখানে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। সেই যায়গায় আবার ফিরে যাব – চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। মহারাজ বললেন, ‘এক্ষুনি চিন্তা নেই। পরে চিন্তা করে জানালেই হবে।’ বাড়িতে তিনটে মানুষ, তিন জনেরই চোখে জল। সেটা আনন্দেরই অশ্রু। তুরা তখনও ততটা মানিয়ে নিতে পারিনি। চেরাপুঞ্জিও ভুলতে পারছিনা।

একদিন সত্যি সত্যিই স্কুল থেকে চিঠই এল। উত্তরতো দিতেইহবে। পরামর্শশুরুকরলাম। কিন্তু যাকেই বলি সেইই বলে ফিরে না যেতে। ভাতৃপ্রতিম এক বন্ধু বলল, ‘দেখ আমি যেই কলেজে পড়াশুনো করেছি সেই কলেজেই পড়াচ্ছি। ফিরে যাসনা।’ চেরাপুঞ্জি রামকৃষ্ণ মিশনের এক শিক্ষক অচিন্তদাকে জিজ্ঞেস করলাম। অচিন্তদার ক্ষুরধার বুদ্ধি। আমাকে বুঝিয়ে বললেন, ‘দ্যাখ, তুমিতো রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজদের চেন। আজকে এক মহারাজ তোমাকে ভালবাসেন, আগামীকাল আর একজন মহারাজ আসবেন আর সব কিছু পালটে যাবে। তাছাড়া তুমি একটা কলেজে আছ আর এই পোস্টটা ভাইস প্রিন্সিপালের নয় অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারের। তুমি তিন জেলা জুড়ে কাজ করছ আর এখানে কাজের পরিধি শুধু এই স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর তোমার কলেজটাও সরকারী কলেজ। আর এটা আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান।’ তাছাড়া এখানে পেনসনও নেই।

কেউ একজন বলুক, ‘তুই যা’। নাঃ কেউই বলছেনা। কেউই যখন বলছেনা আর  না যাওয়াই ভাল। অনেক কষ্টে, অনেক সাহস করে মহারাজকে একটা চিঠি লিখলাম। ভারাক্রান্ত মনে লিখলাম গেলে বেতনের কী সমস্যা হবে, চাকরির কী অসুবিধা হবে। না, কোনটাই মন থেকে লিখছি না। অনেকদিন পর মহারাজ উত্তর দিলেন। খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। একটাই বাক্য লিখলেন, ‘ধরেই নি আমি তোমার কাছে কোন প্রস্তাব রাখিনি।’ এরপর মহারাজের সঙ্গে সখ্য বন্ধ হয়ে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

কয়েক বছর পর শিলং রামকৃষ্ণ মিশনের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। শুনলাম গকুলানান্দ মহারাজ এসেছেন। গকুলানান্দ মহারাজ আমাদের শিক্ষক ছিলেন। স্কুলের তখন হেডমাস্টার ও সেক্রেটারী। দেখা করতে গেলাম। প্রনাম করে বললাম ‘মহারাজ, আমি অনিরুদ্ধ।’ ‘কে অনিরুদ্ধ?’ স্বাভাবিকভাবেই এত বছর পর মনে থাকার কথা নয়। বললাম, ‘চেরাপুঞ্জির অজিত বর্মণের ছেলে।’ ‘ও হ্যাঁ, আয়’। কিছুক্ষণ পর আবার ভুলে গেলেন, ‘কার ছেলে বললি?’ ‘অজিত বর্মণের, মহারাজ।’ ‘আয় এবার আমাদের তিনজনকে একসঙ্গে দ্যাখ, আমি, বর্তমান সেক্রেটারী ও প্রাক্তন সেক্রেটারী আমার ভালবাসার মহারাজ (স্বামী ইষ্টানন্দ মহারাজ)।’ আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছিনা। মহারাজ বললেন, ‘আমিতো ওকে চেরাপুঞ্জি স্কুলের টিচার করে নিতে চেয়েছিলাম।’ ‘কেন গেলিনা কেন? কোওয়াটার পেতিস!’ গকুলানন্দ মহারাজ বললেন। আমি কী বলব বুঝে ওঠার আগেই ইষ্টানন্দ মহারাজ পরিত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন, ‘ওর অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল তাই জয়েন করতে পারেনি।’ এর পর গকুলানন্দ মহারাজ আমাকে ব্রেকফাস্ট টেবিলে নিয়ে গেলেন। মহারাজরা একদিকে বসে ব্রেকফাস্ট করছেন আর বাকিরা অন্যদিকে। চেরাপুঞ্জিতে এই ব্যপারটা ঠিক দেখেছি বলে মনে হয়না। তারপর মহারাজদের ব্রেকফাস্ট একধরনের আর অন্যদের আরেক ধরনের। আমাকে অন্যদিকেই বসতে হোল কিন্তু মহারাজরা যেই ব্রেক ফাস্ট খাচ্ছিলেন তাই আমাকে দেওয়া হোল। আসেপাসে সবাই এক ধরনের খাবার খাচ্ছেন আর আমি বেশ উন্নত মানের খাবার খাচ্ছি। খুব লজ্জা লাগছিল।

যাক মহারাজের সঙ্গে এই শেষ দেখা। গকুলানন্দ মহারাজের সঙ্গেও। তবে বহু বছর পর গকুলানন্দ মহারাজের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ ছিল বহুদিন। উনি তখন দিল্লিতে। আমাকে অনেকবার দিল্লি যেতে বলেছিলেন এবং ওনার সঙ্গে থাকার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু হটাৎ করেই একদিন মেইল আসা বন্ধ হয়ে গেল। বহুদিন পর খবর পেলাম উনি আর এই পৃথিবীতে নেই। আমার এক ভালোবাসার লোক কমে গেল। আমার বিয়েতে আশীর্বাদ করে একটা চিঠি লিখেছিলেন আমার বাবাকে। সেটা এখনো আছে।

হ্যাঁ, সেই ইষ্টানন্দ মহারাজের কথা হচ্ছিল। উনি যখন চেরাপুঞ্জি মিশনের সেক্রেটারী হন তখন নাকি বলেছিলেন, ‘রামকৃষ্ণমিশনে Snow Balling Effect নেই। এক মহারাজ যা করেছেন সেখান থেকে শুরু না করে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করা। উনিই প্রথম মহারাজ যিনি বললেন, ‘স্কুলের আসেপাশের বাচ্চারা আমাদের স্কুলে ভর্তি নাহয়ে ডনবস্কো স্কুলে কেন যায়? আগে এদের আমদের স্কুলে আনতে হবে।’ চেরাপুঞ্জির উনিই প্রথম ও আপাতত শেষ মহারাজ, যিনি ডনবস্কো স্কুলের রেকটারের বাড়ি যেতেন আর ডনবস্কো স্কুলের রেকটার ওনার বাড়ি আসতেন। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সব সমস্যা দূর হয়ে গেল। কী জানি কোন অজ্ঞাত কারনে রামকৃষ্ণ মিশন চেরাপুঞ্জিতে উনি আর বেশীদিন থাকতে পারলেন না। হয়ত তাই নিয়ম। আগে তো সেই নিয়ম ছিল না। একেকজন মহারাজ বহু বছর ধরে থাকতেন। ওনাকে অরুণাচলে বদলি করে দেওয়া হোল। শিলঙের পর ওনার সঙ্গে আর দেখা হয়নি বা আর কোন খবরও পাইনি!

-০-

Tuesday, April 22, 2025

ত্রিমূর্তি

-        অনিরুদ্ধ বর্মণ

শৈল শহর তুরা। এক সরকারী কলেজ। তার নাম তুরা গভর্মেন্ট কলেজে অধ্যাপনা করছিলাম। শহরের একটা ক্লাব – তার নাম নাট্য  সমিতি।  সেখানে আনাগোনা  ছিল। এক ছাত্র স্নাতকস্তরে পড়াশুনো শেষ  করে বসে  আছে।  কোথাও কোন চাকরির সুযোগ নেই। সরকারি চাকরিতে ৮০% তপশিলি জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আর বাকি ২০% অসংরক্ষিত। তাও বাকিদের পাওয়ার উপায় ছিল না। বেসরকারি চাকরির তো কোন সুযোগই নেই। তাও স্নাতক স্তরে ভালো ফল করে থাকলে একটা কথা। সবদিকে একটা নৈরাশ্য। উদ্দমেরও অভাব ছিল।  তখন আমার এক ভগ্নিপতির সৌজন্যে এক ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় স্থানীয় ক্রিকেটের ওপর মাঝে মধ্যে লেখালিখি করতাম। সেটা অবশ্য কোন সাম্মানিক ছাড়াই। বুদ্ধর ওপর একটু মায়া পরে গিয়েছিল। দারুণ হাতের লেখা। সব সংস্থার সার্টিফিকেটগুলো লিখ্‌ত। ভালো টাইপ করত। একটা চোখ পাথরের – অন্য চোখটার অবস্থাও খুব ভালো নয়। মেসোমশাই বহু বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বসে আছেন। মাসিমা গৃহবধূ। একদিন বুদ্ধকে নিয়ে বসলাম ক্লাব ঘরে। বললাম এক ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘দ্যি শিলং টাইমসে’র সাংবাদিক এর পদের জন্য আবেদন করতে। ‘স্যার, আমিতো ভালো করে ইংরেজি বলতেও পাড়িনা আর লেখা তো দূরের কথা’। ‘লেখার কাজটা আমিই করে দেব। তোমার লিখতে হবে না। তুমি শুধু পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে  প্রতিদিনের ক্রাইমের খবরগুলো যোগাড় কর। আবেদনটাও আমি লিখে দিলাম। চাকরি পাওয়া গেলো। প্রতি খবরের ওপর ভিত্তি করে একটা সাম্মানিক পাওয়া যাবে। শুরু হোল কাজ। প্রতদিন পুলিসের কাছ থেকে পাওয়া খবর ও অন্যান্য খবর। একটা ব্যস্ততার জীবন শুরু হোল। বুদ্ধ খুশি, আমিও। স্কুটার নিয়ে গেলাম তেল ভরতে। পেছনে বুদ্ধ। পেট্রোল পাম্পে দেখা আমার এংলো-ইন্ডিয়ান বন্ধুর সঙ্গে। ওর মোটর সাইকেল নিয়ে এসেছে তেল ভরতে। টাইরন একটা স্কুল চালাতো। খুব ভালো স্কুল। ‘দেখনা, বুদ্ধকে কোন কাজ দেওয়া যায় কিনা তোমার স্কুলে। ও তো শিলং টাইমসে সাংবাদিকতা করছে’। ‘তাই নাকি। বুদ্ধ, তুমি কাল চলে এসতো আমার স্কুলে’। আবার আবেদন লিখলাম। পরদিন রাস্তায় দেখা। টাইরনের মোটর সাইকেলের পেছনে একটা বড় টাইপরাইটার নিয়ে বুদ্ধ চলছে স্কুলে। চাকরিদাতা খুশি – চাকুরে খুশি – আর শিক্ষক মহাশয়ের তো খুশিই খুশি। এইভাবে চলল বেশ কিছু দিন নাকি বছর! ততদিনে বুদ্ধর ভেতর থেকে চাকরি পাবার ও চেষ্টা করার প্রবণতা জেগেছে। জুনিয়ার ডিভিশনাল একাউন্টেন্ট পদে আবেদন করল, পরীক্ষা দিল, পাস করল, চাকরিও পেল। একেবারে সরকারি। টাইরন খুব দুঃখ পেল এত ভালো একজন কর্মীকে হারাতে হয়ে। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না।

ততদিনে শিলং টাইমসের একটা অফিস হয়েছে তুরা শহরে। আমি যেই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম তার পাশেরর বাড়িতে ভাড়া নিয়েছিল এক পরিবার। সেই পরিবারের একজন বাদে বাকি সব ছেলেমেয়েরা আমরা ছাত্রছাত্রী। ছোট ছেলে শিবু। স্নাতক স্তরের পড়াশুনো শেষ করে বসে আছে। বুদ্ধর একটা হিল্লে হোল। এবার শিবুকে নিয়ে পরা যাক। ছেলেটা ভালো টাইপ করে। সেই আবার শিলং টাইমস! না এবার আর সাংবাদিক নয়। টাইপিস্টের চাকরি পাওয়া গেল। সেই সুত্র ধরে আবার টাইরন ডি ব্রাসের ‘শেরউড স্কুল’। মালিক-কর্মচারী সখ্য এবারও জমে উঠল। সেই স্কুল থেকেই  ভাগ্য ফিরল শিবুরও। ডাক ও তার বিভাগের আপ্ত সহায়কের চাকরি যোগাড় করে নিল শিবু।

একদিন আমার বাড়িতে এল রামধন। গত বছর উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি বিষয়ে পাস করতে পারেনি। পরের পরীক্ষার ঠিক এক মাস আগে আমার কাছে এল ইংরেজিতে টিউশন পড়ার জন্য। ঘাড় ধরে বের করে দিলাম। ‘এই পরীক্ষায় ফেল করে পরের বছর এস’। তাতে কি আর মন মানে? অনুরোধ করতে লাগল বারে বারে। চিড়ে তো আর গলে না। ‘বললাম তো আগামি বছর এস। এই শেষ সময়ে আমার কিছু করার নেই’। একটু পরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোথায় থাক?’ জানা গেল আমার একটা বাড়ি পরে থাকে। ‘তুমি কি আগে আসতে পারলে না?’ ‘স্যার, আমার তো টিউশানির টাকা দেবার ক্ষমতা নেই’। ‘আমি কি টাকার কথা বলেছি? কত ছেলে-মেয়ে তো বিনা পয়সায় পড়ে যায় আমার কাছে। তুমি কি আসতে পারতে না’। ‘স্যার, খুব ভয় করে আপনাকে’। ‘তাহলে তো আমার করার কিছু নেই। আমাকে যে কেউ ভয় পায় সেটা তো আমার জানা ছিল না। আগামি বছর এস।’ মুখ কাচুমাচু করে চলে গেল। আবার পরের দিন – দিনের পর দিন একই আবদার নিয়ে আসতে থাকল। একদিন বাধ্য হয়ে ওকে বসিয়ে একটা রচনা লিখতে দিলাম। লেখার পর ভুলগুলোর চারদিকে লাল কালি দিয়ে গোল গোল দাগ দিলাম। দিয়ে বললাম। ‘এই দেখ তোমার অবস্থা। এই অবস্থা থেকে তোমাকে পাস করানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আগামি বছর সময় মত এস তখন দেখা যাবে’। তাও তার আসা কমেনা। পরে একদিন আমার লেখা কিছু নোট দিয়ে দিলাম। যথারীতি আবার অসফল হোল। পরেরবার অবশ্য ঠিক সময়মত এল পড়তে। সপ্তাহে তিন দিন। একদিন কথায় কথায় বললাম, ‘প্রতি মাসে কিছু কিছু করে টাকা জমাও’। ‘কি ভাবে জমাবো, স্যার? পাসের বাড়িতে টিউশন পড়িয়ে মাসে একশ টাকা পাই আর দাদার বাড়িতে থাকি আর খাই। বাবা নেই আর মা থাকেন শিলচরে’। ‘একশ টাকার মধ্যে দশ টাকা হলেও জমাও’। যা হোক পড়াশুনো চলতে লাগল আর মাঝে মধ্যে গাল গল্প। পরীক্ষায় পাস করল। এবার বি.এ. ক্লাসে ভর্তি হোল। এক সময় পাসও করল। একদিন বলল। ‘স্যার, একটু বাড়ি যাব। মাকে কিছু টাকা দিয়ে আসব’। আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘তোমার আবার টাকা কোথা থেকে এল। চুরি করলে নাকি?’ ‘না, স্যার, আপনি যে টাকা জমাতে বলেছিলেন, জমিয়েছিলাম। কিছু টাকা হয়েছে। এবার মাকে দিয়ে আসব’। দারুণ আনন্দ হোল।

এদিকে বুদ্ধরও চাকরি হয়ে গেছে, শিবুরও হয়ে গেছে। রামধনের চাকরি হোল শিলং টাইমস অফিসে। তুরা অফিসের ব্যুরো চীফ একদিন আমায় বলল, ‘তুমি তো রামুকে ইংরেজি শেখাও নি শুধু কিভাবে ইংরেজিতে পাস করতে হয় তা শিখিয়েছ’। ‘ঠিক তাই’। আমি স্বীকার করলাম। শিলং টাইমস অফিসে খুব জাঁকিয়ে বসেছে রামধন। একদিন কথায় কথায় ওকে বললাম একটু টাকা পয়শার টানাটানি চলছে। রামধন বলল, ‘স্যার, কিছু টাকা দেব নাকি। আমার কাছে আছে’!!! টাকা রোজগার করা ও টাকা জমানো ভালো আয়ত্ত করে নিয়েছে ততদিনে।

যাক, তিনজনই ভালো আছে। শিবু চলে গেছে শিলঙে। বিয়ে করেছে। ভালই আছে। রমধন বিয়ে করে ভালই আছে। ওর বিয়েতে বর যাত্রী হয়ে গিয়েছিলাম মহেন্দ্রগঞ্জে। না বুদ্ধর কথা ভুলে গেলে চলবে না। এদের আগেই অবশ্য বিয়ে করেছে। হ্যাঁ, আমারও আগে। তবে সে আরেক ইতিহাস।

বয়েস চলে যাচ্ছে কিন্তু বুদ্ধর বিয়ের কোন উদ্যোগ নেই ওর বাবার। অরুপের সঙ্গে আলোচনা করি। কিন্তু আগে তো বুদ্ধকে বোঝাতে হবে। দুজনে একদিন ওকে পাকড়াও করলাম। বোঝালাম অনেক কিছু। উৎসাহ দেখালো। কিন্তু মেশমশাইকে বলার সাহস নেই। আর দেখে মনে হচ্ছে ছেলের বিয়ের ব্যাপারে মেসোমশাইএর কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু ওনাকে বোঝায় কে? মাসিমার দ্বারাও সম্ভব নয়। একদিন অরুপ শিলং যাচ্ছে রাতের বাসে। তার আগে ফোন করল। ‘স্যার, বুদ্ধর নাম করে খবরের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। দেখুনতো বয়ানটা ঠিক আছে কিনা?’ বয়ানের একটা খসড়া তৈরি করা গেল। কিন্তু একটা ঠিকানা তো দরকার চিঠি আসার জন্য। ঠিক করা  হোল আমার পোস্ট বক্স। বিজ্ঞাপন বেরুল। চিঠি আসাও শুরু হোল। মাঝে একজন ঘ্টকও ঢুকে পড়ল। যা হোক, চিঠি গুলো নিয়ে অরুপ আর আমি বসলাম। পরে একদিন বুদ্ধকে ডেকে পুরো ঘটনাটা বুঝিয়ে বলা হোল ও পড়ানো হোল। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে? মেসোমশাইএর সঙ্গে কে কথা বলবে? তখন না আছে বুদ্ধর দেখা, না আছে অরুপের দেখা। মেসোমশাইএর একটা লাঠি ছিল। ভুল বললাম অনেক গুলই ছিল। যেটা প্রতিদিন ব্যাবহার করতেন সেটার কথাই বলছি। ভয় ছিল, ওটা কার পিঠে ভাঙে? অগত্যা একদিন সাহস করে চিঠি গুলো নিয়ে দুরুদুরু বক্ষে রওয়ানা দিলাম বুদ্ধর বাড়ির উদ্দেশ্যে। মেসোমশাই বাড়িতে নেই। ‘বাঁচা গেল এই যাত্রা’। এসে পরার আগে তাড়াতাড়ি করে মাসিমার হাতে চিঠি গুলো দিয়ে বললাম মেসোমশাইকে দিয়ে দিতে।  রাস্তায় মেসোমশাইএর সঙ্গে দেখা। বললাম, ‘মাসিমার কাছে একটা জিনিষ দিয়ে এসেছি। একটু দেখবেন’। বলে আর দাঁড়ানো নয়। এক কথায় পালালাম। পরদিন দুপুরে মেসোমশাই আমার বাড়ি এসে হাজির। ভাগ্য ভালো বাড়ি ছিলাম না। ফিরতেই মা বললেন মেসোমশাই  এসেছিলেন। আর একবার বাঁচলাম। সন্ধ্যের সময় আবার হাজির। মনের ভেতর আতঙ্ক কিন্তু বাইরে তার কোন ছাপ নেই। সামনে গিয়ে বসলাম। লাঠিটাকে দূর থেকে আড় চোখে দেখতে লাগলাম। শান্ত চোখে দেখতে লাগলাম – একটা প্যাকেট বের করলেন। হৃদপিণ্ডটা যেন হাতে চলে এল – প্যাকেট থেকে বেরুল সেই চিঠিগুলো! শ্বাস বন্ধ হবার যোগাড় – শাস্তি শোনার জন্য অপেক্ষা এক ছোট শিশুর মত অবস্থা তখন আমার। হঠাৎ পরিবেশটা পালটে গেল। একটা একটা করে চিঠি খুলতে লাগলেন। প্রত্যেকটা চিঠিতে প্রয়োজন মত কিছু কিছু শব্দের নিচে দাগ দেওয়া। চিঠিগুলো মেসোমশাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন, যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে। ‘সিলেটি হলে চলবে না। গোয়ালা ঘোষ হলে চলবে না’। এই করে করে প্রায় সবটাই বাতিল হোল। আপাতত লাঠিটা এবারকার মত আমার পিঠে ভাঙল না। একটা নতুন অধ্যায় শুরু হলে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার সব চুপচাপ। হঠাৎ শুনলাম বদ্ধর বিয়ে ধুবড়িতে! খুব খুশি হলাম কিন্থু একটু দুঃখও পেলাম। কিভাবে খবর পাওয়া গেল, কবে মেয়ে দেখা হোল কিছুই জানলাম না। যাক  তাও তো  বুদ্ধর বিয়ে বলে কথা - খুব আনন্দ করলাম।

নিজে নিজেকে বাহবা দিলাম – আমার ত্রিমূর্তির আর এক মূর্তির হিল্লে হোল অনেকদিন পর। 

 A Study of the Voice Modulations of Speakers of Bengali  of Cooch Behar

ii. Introduction

·        Origin of the research problem.

This paper was conceived way back in the year 1988 during a course on Phonetics & Phonology at Central Institute of English & Foreign Languages (CIEFL), [presently EFL University], Shillong Campus, when a fellow participant of mine, Mr Rajat Bahttacharjee of Badarpur, while talking on aesthetics of language posed a question, ‘Why does a particular dialect sound sweeter to our ears than others?’. He was actually referring to the dialect spoken around Kolkata (West Bengal) being sweet (possibly he had the Bengali Standard Dialect in mind), and the variety spoken in Sylhet (presently Bangla Desh) sounds harsh. (A lot of speakers of Bengali speak the dialect spoken in Sylhet). Not having given much thought to it most of us laughed at the idea, and some of us even tried to explain it by saying the variety one is accustomed to listening to sounds sweeter than other varieties. This, of course, did not pacify my friend.

Years later, the idea came back to my mind. Then the actual quest began. This paper will discuss the concept I have in mind, and as it needs actual field work, I will leave it at the stage of forming a hypothesis only.

Contention no. 1

               Sounds are produced when anything vibrates. This is also true of human speech. Some vibrations have to be produced for the production of speech. That means all our utterances are essentially sounds. Again, if we go by the jargon of music, there are seven sounds in the Indian system of music (Saptak) and eight sounds in the western system (Octave). If all utterances are basically sounds and all sounds have to be within the gambit of Saptak or Octave, each sound produced by us (whether through speech or otherwise) can be referred to as a tone in the Saptak or Octave, that is, Sa, Re, Ga, Ma, Pa, Dha, Ni in the Indian system and Do, Re Mi, Fa, So, La, Ti, Do in the western system.

 

Contention no. 2

               Then, of course, there are the three basic Octaves – Higher Octave, Middle Octave and Lower Octave. There are also Higher Higher Octave and Lower Lower Octave. A Do in the middle Octave will have a different frequency than the Do in the Higher or Lower Octave and so on. Frequency also has a range.

               In C+ a Do in the Middle Octave has a frequency of 240 Hz, RE 270 Hz, Mid 288 Hz, Fa 320 Hz, So 360 Hz, La 405 Hz, and Ti 432 Hz. A Do in the Higher Octave has a frequency of 480 Hz  whichis double that of Do in the Middle Octave. The frequency for So is double that of Do in the Middle Octave i.e., it is 360 Hz.

 

Contention no. 3

               Now, then there is another aspect to it. A Do say in the middle Octave produced by a guitar will not be the same as the Do in the Middle Octave produced by a synthesiser or any other instrument. It will also vary from person to person. There is a difference in quality, which is known as timbre.

 

Contention no. 4

               In Error Analysis, which is a field in Applied Linguistics, Larry Selinker says that when a learner learns a second language his language his language at a point of time may be called ‘Interlanguage, which is between his first language and the target language. This language has a grammar of its own. Rules keep on changing with added information. For example, we may say that students of St. Stephen’s College, Delhi speak/use English in a way which is quite different from the English spoken/used by students of say, Sohra College, Cherrapunji. He ‘interlanguage’ of students of St. Stephen’s college with reference to English differs from the ’interlanguage’ of students of Sohra College with reference to English.

 

Contention no. 5

               Stress, intonation, length of vowels may also vary from person to person, community to community and place to place.

 

Contention no. 6

               Extrapolating from the ‘interlanguage’ theory of Selinker we may say that people use Sargam or tune (combination of notes) while speaking. This sagam varies from people to people (idiolect), community to community (dialect/language). For variation of the use of sargamsideolects or dialects or even languages sound sweet or harsh or let’s say musical.

 

               In their paper Emotional Patterns in Intonation and Musicpublished in ‘Intonation’ edited by Dwight Bolinger in 1972 Ivan Fόnagy and Lara Magdics describe the melodic pattern of ten different emotions or emotional attitudes chosen more or less arbitrarily from Hungarian. The ten feelings and attitudes are: joy, tenderness, longing, coquetry, surprise fear, complaint, scorn, anger and sarcasm.

They hypothesis can be translated into theory with collection of samples of speech patterns of different groups and analyzing them with the help of Instrumental Phonetics.